সংগৃহীত ছবি
মেজর আখতার (অব.) :
রাজনীতি এখন সরল রেখায় চলছে। কথাটি বোঝার আগে সরল রেখা কাকে বলে তা আমাদের পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। আমরা সবাই জানি সরল মানে সোজা এবং রেখা মানে বিন্দুর চলার পথ। তাহলে সরল রেখার মানে হলো যে রেখা এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যেতে কোনো দিক পরিবর্তন করে না অর্থাৎ সোজাসুজি চলে। সরল রেখার কতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন সরল রেখা কখনোই নিজেকে নিজে ছেদ করতে পারে না, সরল রেখার উৎপত্তি রেখা থাকে, এর কোনো প্রান্ত বা শেষ বিন্দু নেই, অসীম অবধি বিস্তৃত এবং সরল রেখা রেখাংশ বা রশ্মি উৎপন্ন করে। আমাদের চলমান রাজনীতি যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে যাই তাহলে দেখা যাবে সরল রেখার সব বৈশিষ্ট্যই বর্তমান রাজনীতিতে বিদ্যমান। সরকার তার রাজনীতি তার মতো করে যাচ্ছে সোজা-সরলভাবে। কোনো জটিলতা নেই। দেখে মনে হয় সবকিছুই পরিকল্পিত এবং ছকে আঁকা। একইভাবে বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি আরও বেশি সহজ এবং সরল। সবকিছুই নিজেদের পরিকল্পনা ও ছক মতো। কারও সঙ্গে কারও কোনো বিভেদ নেই, নেই কোনো সংঘাত। উভয় পক্ষই যেন কোনো নির্দিষ্ট দর্শকদের মনোরঞ্জন বা সন্তুষ্টির জন্য সুতার টানে পুতুলের মতো নেচে যাচ্ছে। সরল রেখার মতো তাদেরও সব কাজের উৎপত্তি আছে কিন্তু এর কোনো প্রান্ত বা শেষ নেই। সরল রেখার যেমন রেখাংশ আছে তেমনি আমাদের রাজনীতির খন্ড অংশ বা খন্ডাংশ আছে কিন্তু এর সম্পূর্ণতা নেই। সরল রেখা যেমন রশ্মি উৎপন্ন করে তেমনি আমাদের রাজনীতি চমক উৎপন্ন করে কিন্তু তার প্রকৃত রূপ বা অবস্থান ধরে রাখতে পারে না।
রাজনীতি অবশ্যই সরল রেখায় চলছে। সরকার বলে যাচ্ছে আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য হবে। সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক নির্বাচন কমিশন এক কদম জোরেশোরে এগিয়ে এসে সরকারের কথায় সায় দিয়ে যাচ্ছে। আবার নিজেদের নিরপেক্ষ বলে চাপাবাজি করছে! অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো তাদের ভাঙা গলায় চিৎকার করেই যাচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করবে না। তাদের দাবি এ সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। যেন মামার বাড়ির আবদার! উনারা বললেন আর সরকার সুরসুর করে ভাগ্নেকে ডেকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে নিজেরা আঙুল চুষতে থাকবে! আর বিরোধী দলগুলো তখন বাকবাকুম করে নির্বাচনের জন্য পায়রা নাচ নাচতে থাকবে! তাদের আবদারে সরকারি দল ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে বিনা পয়সায় সেই নাচ ঘরে বসে বসে দেখবে! একটি বিষয় ভাবতে বড় অবাক লাগে। আর তাহলো অনেকে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন এই বলে যে বিএনপি ছাড়া নাকি কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না! তাই যদি সঠিক হয় তাহলে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন সঠিক হবে কি না সেই প্রশ্নের উত্তর কি জানা আছে! বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি ছাড়া যেমন কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না তেমনি আওয়ামী লীগ ছাড়াও কোনো নির্বাচন একইভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে কোনো নির্বাচনে এ দুটি দলের সরাসরি অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প বর্তমানে নেই এবং অদূর ভবিষ্যতে হবে কি না তা-ও স্পষ্ট নয়। এ দুটি বড় দল ছাড়া বাকি তাবৎ সব দল মিলে সংসদে ৫০টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনাও এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পারেনি। অন্যান্য যে কোনো নির্বাচন না হয় বাদই দিলাম। দেশে অন্তত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল আছে যাদের প্রায় সবাই জাতীয় নেতা কিন্তু কোথাও থেকে নিজেদের দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিত হয়ে আসার মতো ভোট তাদের নেই। তার চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের অনেক চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন যারা তাদের এলাকা থেকে নিজের পরিচয়ে নির্বাচিত হয়ে আসার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে তাদের কোনো অবস্থান নেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের বাকি সব রাজনৈতিক দল বা নেতাদের নির্বাচনে জিতে আসতে হলে খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার পায়ের ধুলা লাগবে। কথাটি শুনতে খারাপ লাগলেও এটি অতি বাস্তব। কিন্তু খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনাকে তাদের আসন থেকে জিতে আসতে কারোরই তোয়াক্কা করতে হবে না।
রাজনীতি সরল রেখায় চলছে। আওয়ামী লীগের নৌকার সব সওয়ারি সারা দিন ব্যস্ত বিএনপিকে বাদ দিয়ে শুধু নৌকা নিয়ে এগিয়ে যেতে। তারা সারা দিন প্রধানমন্ত্রীকে কানপড়া দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া জনগণের আর কোনো নেতা নেই। সারা জাতি প্রধানমন্ত্রীর আঁচলের তলে আশ্রয় নিয়েছে যেখান থেকে কেউ আর বাইরে যাবে না। প্রধানমন্ত্রীও সরল বিশ্বাসে তাদের কথা বিশ্বাস করেন। এ সুযোগে আমলা ও পুলিশের পোয়াবারো। আমলা ও পুলিশ নৌকার কান্ডারিদের কোনো পাত্তাই দেয় না। আর আমলা ও পুলিশের বলয় ভেঙে পরিবারের কিছু সদস্য ও হাতে গোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ ভিড়তেও পারে না। আর যারা কাছে যেতে পারে তাদের প্রথম বক্তব্যই হলো- খালেদা জিয়ার ক্যান্সার হয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে, মা-ছেলের সম্পর্ক ভালো না, ছেলে চায় না মা জেল থেকে বের হোক, বিএনপির স্থায়ী কমিটি ভেঙে যাচ্ছে, ফকরুল ম্যানেজ হয়ে গেছে, খন্দকার মোশাররফ দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে, আমেরিকানরা বিএনপিকে পাত্তা দিচ্ছে না, ভারত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দেখতেই পারে না, ওরা পাকিস্তানের চর, ওরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়, খালেদা জিয়ার ভাইবোনেরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ভক্ত ও অনুগত, তাদের সঙ্গে তারেক রহমানের প্রচ- বিরোধ, বিএনপি ভেঙে যাচ্ছে, বিএনপির সব সাবেক মন্ত্রী ও এমপি নির্বাচনে আসার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছে, বিএনপি নেতারা সবাই নির্বাচনে আসার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেই সবাই সুড়সুড় করে নির্বাচনে নেমে যাবে, বিএনপির ঢাকা মহানগর সম্পূর্ণ তাদের কবজায়, তাদের কথার বাইরে একচুল নড়ার ক্ষমতা তাদের নেই, ছাত্রদলকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কোথাও ছাত্রদলের নামার ক্ষমতা নেই, তারেক রহমান টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না, বিএনপি নেতারা কমিটি-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এ আলাপগুলো সেরে প্রধানমন্ত্রীর মুড বুঝে যে যার ধান্দা ফিকির করে আসছে। এই হলো বর্তমানের আওয়ামী লীগের ঘরোয়া রাজনীতি যা খুবই সহজ ও সরল। তার ওপরে আছে বিরোধী দল সম্বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কল্পকাহিনি, কিছু পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের প্রচারণা যা রাজনীতিকে সোজা পথেই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
একই সার্কাস চলছে সরকারবিরোধী তাঁবুতে। তবে সেই তাঁবু মহাসমুদ্রের ওই পাড়ে হওয়ায় এখানেও সবাই শাহী মহলে যেতে পারে না। যারা ভিসা টিকিট ব্যবস্থা করে যায় তারা গিয়েই বলে একটু ধাক্কা দিতে পারলেই সরকার পড়ে যাবে, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই, সরকারের কোনো জনভিত্তি নেই, এ সরকার শুধু টিকে আছে পুলিশের জোরে, প্রধানমন্ত্রী আর বেশিদিন নেই, আমেরিকানরা ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসাতে সামরিক শাসনের ব্যবস্থা করছে, সেনা কর্তৃপক্ষ এখনো রাজি হচ্ছে না তাই দেরি হচ্ছে, সরকার আগামী নির্বাচন করাতে পারবে না, ভারত শেখ হাসিনাকে আর আগের মতো বিশ্বাস করছে না, জনগণ যে কোনো সময় ডাক দিলেই তারা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসবে, শুধু নেতার ডাকের অপেক্ষা, ক্ষমতাসীনরা যে কোনো সময় আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে, বিএনপি এখন সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং সবাই নেতার প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত, দলের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে নেতার স্কাইপি মিটিং দলকে দারুণভাবে চাঙা করে তুলছে, ইউপি চেয়ারম্যানদের ঢাকায় এনে বিভাগভিত্তিক আলোচনায় সরকার ভয় পেয়ে গেছে, চেয়ারম্যানেরা এখন থেকে সব আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত, নেতার বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে তারা জীবন দিতে সদা প্রস্তুত, ম্যাডাম জেলে মারা গেলে দেশে আগুন লাগবে, তারা পালানোর পথ পাবে না, ওমুক ওমুক নেতা দলের সঙ্গে বেইমানি করছে না হলে তারা কবেই দেশ ছেড়ে পালাত, শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মেনে উপায় নেই-, সব বিদেশি শেখ হাসিনার বিপক্ষে চলে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। তার ওপরে যোগ হয়েছে ইউটিউবের অদ্ভুত অদ্ভুত কাহিনিচিত্র, বিদঘুটে সব অপপ্রচার, মিথ্যা ও অলিক কল্পকাহিনি। সব মিলিয়ে রাজনীতি এখন সোজাপথে।
এ সরল রেখার রাজনীতি দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর করে ফেলছে। নিজ দেশের মাটিতে স্বাধীনতার বিরোধী বলে কারোর রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে রাজনীতির নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকারও কারও নেই এবং থাকতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা তৎপ্রজন্ম কখনোই তা মেনে নেবে না। সবাইকে রাজনীতি করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মেনে এবং সব মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে যথাযথ সম্মান করে। ভারতবিরোধী বা ধর্মের পক্ষে বলে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাউকে কোনো স্থান দেওয়া যেতে পারে না। এ সমীরণের বাইরে যাওয়ার কারণে অতীতে স্বাধীনতার পক্ষের দুজন রাষ্ট্রপতিকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে, যার পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া যায়। না মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে নিয়ে ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি নির্বোধের মতো অপরিণামদর্শী যে রাজনীতি করেছে তার মোজেজা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। বিএনপির সেই মহা ভুলের রাজনীতির সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত উচ্চমানের কৌশল, সঠিক রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার বিশাল দক্ষতা, স্বাধীনতার স্থপতিকে যথাযথ মর্যাদায় পুনর্বাসিত করে জাতির পিতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে দোর্দ- প্রতাপে একনাগাড়ে ১৫ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করে যেতে পারছে। শেখ হাসিনার এ সফলতা সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে নিয়ে বিএনপির রাজনীতির ও ক্ষমতার অংশীধারী বানানোর অমার্জনীয় অপরাজনীতির কারণে। আজকে সাহস করে বলতে চাই, ইতিহাসের পাতা উল্টালে সত্য বেরিয়ে আসবে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে হাঁটতে যাওয়ার কারণেই আমাদের দুজন মহান রাষ্ট্রপতিকে নির্মমভাবে হারাতে হয়েছে। আজকের নির্মম সত্য হলো- খালেদা জিয়ার জীবনের এ কষ্ট, নির্যাতন, নিপীড়ন, অপমান সবকিছুই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সখ্যের জন্য। আমি স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করি স্বাধীনতার বিপক্ষে বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিপক্ষে বা ইসলামের পক্ষে রাজনীতি করার পূর্ণ অধিকার দেশের সব নাগরিকের আছে; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কোনো শক্তির বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার অধিকার নেই। থাকতে পারে না। এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের রক্তে অর্জিত দেশ। এ দেশ শাসন করার একমাত্র অধিকার মুক্তিযোদ্ধা ও তার প্রজন্মের এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাংলাদেশের সব মানুষের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের গর্ব। জাতির পিতার কন্যা। তিনি যোগ্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ, চৌকশ, মানবতাবাদী, সংবেদনশীল ও জনকল্যাণকামী। সবচেয়ে বড় কথা হলো শেখ হাসিনার চেয়ে ত্যাগ একমাত্র উনার বোন ছাড়া আর কারও নেই। আমরা কেউ মানি আর না মানি শেখ হাসিনা বিশ্বে অতি পরিচিত ও সম্মানিত একজন নেতা। বর্তমান বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনা এবং শেখ হাসিনা মানে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। শেখ হাসিনার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সব ভুলভ্রান্তির পরেও তিনি এখনো জনগণের মণিকোঠায় রয়ে গেছেন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। উনারও অনেক ত্যাগ রয়েছে। তিনি স্বামী হারিয়েছেন, পুত্র হারিয়েছেন। গত ১০ বছর ধরে নির্যাতন, জেল, জুলুম ভোগ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে রাজনীতি করতে যাওয়ার সবচেয়ে বড় ও নির্মম মূল্য তিনি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে জনগণ এর অবসান চায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যথাযথ সম্মান এ দেশের মানুষ আশা করে। জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভালোবাসে এবং উনার ক্ষমতায় থাকা নিয়ে জনগণের কোনো বিরোধিতাও নেই। গত ১৫ বছরে জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে কোনো কথা বলেনি, ২০১৪ এর নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করেনি, ২০১৮ সালে দিনের ভোট আগের রাতে হওয়ার অভিযোগ উঠলেও জনগণ রাস্তায় নেমে আসেনি। কিন্তু জনগণ এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি নির্বাচন চায়, যে নির্বাচনে জনগণ নিজের হাতে ভোট দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে চায়। জনগণ দেখতে চায় যে কোনো নির্বাচনে যেন ৫০% এর বেশি ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে এসে নিরাপদে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোটটি দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকুক তাতে জনগণের কোনো আপত্তি নেই, তবে জনগণের ভোটে যেন ক্ষমতায় থাকে তার নিশ্চয়তা জনগণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চায়।
জানি না রাজনীতি এভাবেই সরল পথে চলবে কি না। তবে এটি হয়তো স্পষ্ট করেই বলা যায়, এ সরল পথের কোনো প্রান্তেই মঙ্গল নেই। উভয় প্রান্তেই ধ্বংস অপেক্ষা করছে। চার পাশের উঁচু দেয়ালঘেরা দরবার হলে যেমন জনগণের কথা শোনার সুযোগ থাকে না তেমনি জনগণ যখন রাজপথে চলে আসে তখন কারও কথা শোনার সুযোগও জনগণের থাকে না। তখন সরল রেখা কেমন যেন বক্র হয়ে যায়। তাই বিনয়ের সঙ্গে জনগণের কথা বলছি- সরল রেখার রাজনীতি জনগণ চায় না। বর্তমানকে জনগণ নীরবে মেনে নিচ্ছে, এর মানে কিন্তু আজীবন মেনে নেওয়ার নিশ্চয়তা নয়। নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে যা অনেক কিছু ধ্বংসের কারণ হতে পারে। রাজনীতির সরল পথ বদলাতে হবে। বদলালেই মঙ্গল। সবাই প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য। সূএ :বাংলাদেশ প্রতিদিন